
প্রকাশিত: Fri, Dec 16, 2022 3:56 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 7:06 AM
১০ ডিসেম্বর তো পার হলো, পরের টেকনিক কী?
সাঈদ তারেক
এখন চলছে পোস্ট মর্টেম। কে হারলো আর কে জিতলো, কার লাভ কার লস হলো। রাজনীতি যতোটুকু বুঝি বা আন্দোলন সংগ্রাম যতোটুকু দেখেছি, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে কতোগুলো ধাপ পার হতে হয়। আমি বেশ আগে থেকেই বলে আসছি, স্বাভাবিক হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদী সরকারের প্রথম দুই বছর বিরোধী দলের কাটে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে। পরের বছর বালা-মুসিবত কিছুটা কমে এলে স্টক টেকিং, মানে কি আছে কতোটা হারালো। তার পরের বছর ঘর গোছানো এবং ওয়ার্মআপ। শেষের বছর আন্দোলন, নির্বাচনের ছয় মাস আগ থেকে ফাইনাল রাউন্ড। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এসপার-ওসপার। অবশ্য এর মাঝে কোনো অন্যথা হলে ভিন্ন কথা।
১৩ বছরের ধকল কাটিয়ে বিএনপি কেবল ওয়ার্মআপের পর্যায়ে আছে, এর মধ্যে ১০ তারিখে কীভাবে সরকার ফেলে দেবে হিসাবটা মিলছিলো না। মির্জা সাহেবও বলেছিলেন, এটা হচ্ছে তাদের বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচির শেষটা। তার মানে এই দিনই সরকার ফেলে দেবার কোনো পরিকল্পনা তাদের নাই। একপর্যায়ে এটাও বলেছিলেন, ১০ তারিখে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সেটাই হওয়ার কথা। বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচির পর চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবার জন্য মাঝখানে আরও বেশ কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে। অতীতে তেমনটাই হয়েছে। সে হিসাবে ফাইনাল রাউন্ড শুরু হওয়ার কথা জুলাই আগস্টে কোরবানির ঈদের পর।
কিন্তু সিচুয়েশনটা টানটান হয়ে ওঠে কিছু নেতার অতিকথন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু অর্বাচীনের বেহুদা লম্ফঝম্ফের কারণে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোয় বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও অভাবনীয় সাফল্য বিশেষ করে সাধারণ মানুষের বিপুল অংশগ্রহণের কারণে কিছু অকালপক্ক মনে করলেন, এই বুঝি মোক্ষম সুযোগ, ঢাকায় একটা টোকা মারলেই সরকার পড়ে যাবে। তাতেও সমস্যা ছিলো না, এমন ধারণা পোক্ত করতে সরকারও কম গেলো না। তারা অমন নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন কেন সেটাও এক রহস্য। আরও এক রহস্য বিএনপি নয়াপল্টন নিয়েই গোঁ ধরে রইলো কেন। শেষ পর্যন্ত তো পল্টন ছাড়তেই হলো। সোহরাওয়ার্দী কি গোলাপবাগের চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ। যে জনসমাগম গোলাপবাগে হয়েছে তা যদি সোহরাওয়ার্দীতে হতো ইমপ্যাক্টটা কেমন হতো। আবার পল্টনেই যদি অনুমতি মিলতো খিচুড়ি খেয়ে রাস্তায় বসে গেলেই কি সরকার দৌড়ে পালাতো। বেশি উত্তেজনায় মতিভ্রম হওয়া বিএনপি নেতাদের পুরনো রোগ, এবার আরও একবার তার প্রমাণ মিললো। সরকার পক্ষের কাছে কি গোয়েন্দা রিপোর্ট ছিলো জানি না তবে তারা যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বাচালের তর্জনগর্জনে দিশাহারা হয়ে পড়েছিল এটা বেশ বোঝা যায়। নইলে পল্টন দেওয়া যাবে না বলে ধনুর্ভঙ্গ পণ বা অফিস রেইড করে কাচিয়ে সবাইকে নিয়ে জেলে ঢোকানো, দুই মির্জাকে কথা বলার জন্য উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ফাটকে আটকানোর কোনো সঙ্গত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
হয়তো আগেই খবর পেয়ে গেছিলো কোনো স্যাংশন আসছে না, পুরনো তরিকা ধরেছিল, অথবা ওপরের নজরে পরতে ওভার স্মার্ট হয়ে উঠেছিল। যেটাই হোক, কী হলো আখেরে। যানবাহন বন্ধ, পথে পথে চেকপোস্ট, একাত্তরে খানসেনাদের লুঙ্গি খুলে দেখার মতো বাসযাত্রী পথচারিদের মোবাইল খুলে চেক করা, পাড়া মহল্লা রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাঠিসোটা হাতে দলীয় ক্যাডারদের মহড়া- এতো কিছু করেও তো জনসমাগম ঠেকানো গেলো না। গোলাপবাগে পারমিশন মিলেছে এই খবর চাউড় হওয়ামাত্র হাজার হাজার মানুষ ছুটে গেলো। রাতেই মাঠ পূর্ণ। কোথায় ছিলো এতো মানুষ। কারা এরা। যেন ১৬ ডিসেম্বর একাত্তর। সারেন্ডারের সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। তাহলে এই এতো গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা, গুলি কোনো কাজে দিলো? এইসব গায়েবী মামলা বা হাজার হাজার গ্রেপ্তারে কিছু অসৎ পুলিশের হয়তো পোয়াবারো হলো, কিন্তু এদের তো কেয়ামত পর্যন্ত আটকে রাখা যাবে না। অফিসও ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। মাঝখান থেকে কিছু বিদেশি নসিহত এসেছে, আল জাজিরা একটা দীর্ঘ এক্সক্লুসিভ বানিয়ে এমন একটা মেসেজ দিয়েছে যে বাংলাদেশের জনগণ এখন গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ে রাজপথে। এতে কি সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল হলো? অতি উৎসাহিরা সব সময় ডুবিয়েই থাকে, কোনো সরকারকে কখনও ভাসাতে দেখি নাই।
এর পর কী। বিএনপি তো কেবল শুরু করলো, সরকার? হামলা, গুলি, মামলা গ্রেপ্তার, মোটামুটি শেষ কার্ডটা তো খেলে ফেলেছে। এরপর? বিরোধীরা একের পর এক তাদের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবে, কীভাবে মোকাবেলা হবে সে সব। চিরাচরিত পুরনো কার্ড। পিটুনি, গুলি। রাতের আঁধারে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হানা, ছেলেকে না পেয়ে বাপকে পিটিয়ে মেরে নেতা-কর্মীদের দৌড়ের ওপর রেখে। নিষেধাজ্ঞা, ১৪৪ ধারা, ধরে ধরে স্পেশাল পাওয়ার্স এ্যাক্টে অনির্দিস্টকালের জন্য ডিটেনশন, জরুরি অবস্থা, তাতেই কি স্রোত আটকে রাখা যাবে? দেখতে দেখতে এর মধ্যে নির্বাচন এসে যাবে। সবাইকে যদি ফাটকে নিয়ে তোলা হয় নির্বাচনটা হবে কাদের নিয়ে। আমরা আর আমরার মামুরা। সারা দুনিয়া বলছে ইনক্লুসিভ ইলেকশন। ১৪ ও ১৮ মার্কা আর একটা ইলেকশন কি দুনিয়াকে গেলানো যাবে? সরকারি এক নেতা নাকি বলেছেন, তারাও নিষেধাজ্ঞা দিতে জানেন, তার অর্থ অমন একটা ইলেকশন করে সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখানো। ১০ ডিসেম্বর ভালোয় ভালোয় পার হয়েছে, কিন্তু তৈরি করেছে এমনি অনেক প্রশ্ন। চলছে বিশ্লেষণ। তবে রাজনীতির হিসাব বলে এ খেলায় বিরোধীদের হারাবার কিছু নাই, যতোটা আছে সরকার পক্ষের। অতি উৎসাহি বা ক্লাউনদের কথায় না নেচে বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করা গেলে সবার জন্যই ভালো হবে, স্বাভাবিক বিচারবোধ এটাই বলে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
